প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়াগ আইন, ২০২২- এর গেজেট প্রকাশ করেছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এর মধ্যে দিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগে আইন প্রণয়ন নিয়ে বিতর্কের অবসান হলো।
আইনের ১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ নামে অভিহিত হবে এবং যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। ধারা ২-তে বিভিন্ন সজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটি গঠন:
আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে ৬ (ছয়) জন সদস্য সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন। সদস্যের মধ্যে থাকবেন- প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক, যিনি অনুসন্ধান কমিটির সভাপতিও হবেন, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত ২ (দুই) জন বিশিষ্ট নাগরিক, যাদের একজন হবেন নারী।
অনুসন্ধান কমিটি তার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবে। ৩ (তিন) জন সদস্যের উপস্থিতিতে অনুসন্ধান কমিটির সভার কোরাম গঠিত হবে। সভায় উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। এই কমিটি গঠনের ১৫ (পনেরো) কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে।
অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি:
আইনের ৪ ধারায় কমিটির দায়িত্ব ও কার্যবলী নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করিবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিন্নতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে এবং এজন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে ২ (দুই) জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে কমিটি।
সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা:
আইনের ৫ ধারায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পদের জন্য কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় তার অনূন্য ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা:
আইনের ৬ ধারা অযোগ্যতা নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করা যাবে না, যদি তিনি কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন, তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন।
এছাড়া যদি তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস আইনের অধীন যেকোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন, বা আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন, তবেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সিইসি বা নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পাওয়ার অযোগ্য হবে।
আইনের ৭ ধারায় অনুসন্ধান কমিটি সাচিবিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে। ৮ ধারা সরকারকে আইনের অধীনে বিধিমালা প্রণয়নের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। আর ৯ ধারায় আগের দুই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।